বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে লালমনিরহাটে আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা হাজার হাজার নারী পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে বড়বাড়ি শহিদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় মাঠে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা এই ঘোড়াদৌড়ের উদ্বোধন করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।

এর আগে সকালে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এর আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে উপস্থিত সকলকে পান্তাভাত আপ্যায়ন করা হয়। চার দিনের এ প্রতিযোগীতা শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ঘোড়ার মালিকদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।

ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা ও মেলা উপভোগ করতে লালমনিরহাট জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসে। এছাড়াও শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ ষাটোর্ধ্ব বয়স্কসহ নানা শ্রেণীপেশার হাজারো মানুষেরও ভিড় হয়। অনেকে আবার ঘোড়াদৌড় দেখতে আগের দিনই স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন এবং খেলার মাঠে এসে বসে থাকে।

শুধুমাত্র ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য সকাল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী শিশুরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। উৎসবমুখর পরিবেশে ঘোড়ার দৌড় ও সওয়ারিদের রণকৌশল উপভোগ করতে মাঠের চতুরদিকে হাজির হয় হাজার হাজার দর্শনার্থী। প্রথম দিন ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগীতায় ৩২টি ঘোড়া অংশ নেয়। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিযোগিতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন আগত দর্শকেরা।

এসব সাওয়ারিদের মধ্যে সবার নজর ছিল সর্বকনিষ্ঠ ১২ বছরের হালিমা বেগমের ওপর। চারজনের ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় হালিমা প্রথম স্থান অধিকার করে সবার নজরও কারেন।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এর আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে উপস্থিত সকলকে পান্তাভাত আপ্যায়ন করা হয়

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী হালিমা বেগম বলেন, আমি নাটোর থেকে বাবার সাথে এই ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছি এবং এখানে খেলায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থানও অধিকার করেন। এখানে এই প্রতিযোগিতা খুবই আকর্ষণীয় এবং হাজার হাজার দর্শক হয় বাবার মুখে শুনেছি। এখানে এসে এর সত্যতা পেলাম। এজন্য হালিমা আয়োজক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু সাহেবকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ঘোড়াদৌড় দেখতে আসা জামাল বাদশা বলেন, আমি কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে ঘোড়াদৌড় দেখতে এসেছি। প্রতি বছর ধরে এখানে ঘোড়াদৌড় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি প্রতি বছর এখানকার ঘোড়াদৌড় দেখতে আসি। এবছরও এসেছি। আমি চাই প্রতি বছর যেনো এখানে ঘোড়াদৌড় ও গ্রামীন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এমন আয়োজনে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে হারিয়ে যাওয়া ঐহিত্যকে মনে করিয়ে দিবে। তবে এমন আয়োজন প্রতিবছর হলে ভালো হয়। তাহলে মানুষ গ্রামীণ ঐতিহ্য হারাবে না।

ঘোড়াদৌড় দেখতে আসা মাসুমা খানম বলেন, টিভিতে অনেকবার ঘোড়াদৌড় দেখেছি কিন্তু সরাসরি কখনো দেখা হয় নাই। শহরের কোথাও ঘোড়াদৌড় হয় না। তাই বড় ভাইয়ের সাথে নাটোর থেকে থেকে এখনে ঘোড়াদৌড় দেখতে এসেছি। এ আয়োজন দেখতে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। এই আয়োজনে এখানে এত মানুষের সমাগম হয় শুধু মানুষের মুখে ও সংবাদে দেখতাম, কিন্তু আজ বাস্তবে তা দেখতে পেলাম। এ প্রতিযোগিতা দেখে খুবই ভালো লেগেছে।

এ প্রতিযোগিতার আয়োজক কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। মূলত গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও বিনোদনের উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন করা হয়। ঘোড়াদৌড় ছাড়াও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য দাড়িয়াবান্ধা, চকরচাল, ঠুস, ঘুড়ি উড়ানো ও সাঁতার খেলারও আয়োজন করা হয়েছে। ৪ দিনের এ প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ঘোড়ার সাওয়ারদের পুরস্কৃত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মেলায় দোকানীরা বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ খেলনা এবং বাহারি খাবারের পসরা বসানো হয়। গ্রামীণ এ মেলা প্রতিদিন সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত চলে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, বাংলার সংস্কৃতি মনে করিয়ে দিতে আর এলাকাবাসীকে আনন্দ দিতেই তার এই সামান্য আয়োজন। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও মাদক মুক্ত সামজ গড়ে তুলতে এ আয়োজন করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com